Posts Tagged ‘ইস্তীআব’

হযরত আবু সাঈ’দ খুদরী রদিয়াল্লহু আ’নহু এর পিতার ইন্তেকাল

হযরত আবু সাঈ’দ রদিয়াল্লহু আ’নহু বর্ণনা করেন, আমাকে উদুহের যুদ্ধের জন্য পেশ করা হইল। আমার বয়স ছিল তের বছর। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কবুল করিলেন না। আমার পিতা সুপারিশও করিলেন যে, তাহার যথেষ্ট শক্তি আছে এবং হাড়ও মোটা আছে। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমার দিকে দৃষ্টি উঠাইতেছিলেন এবং নামাইতেছিলেন। অবশেষে অল্প বয়স্ক হওয়ার কারণে অনুমতি দিলেন না। আমার পিতা ঐ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিলেন এবং শহীদ হইয়া গেলেন। কোন ধন সম্পদ কিছুই ছিল না। আমি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে কিছু চাওয়ার উদ্দেশ্যে হাজির হইলাম। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখিয়া এরশাদ করিলেন, যে সবর করে আল্লহ তায়া’লা তাহাকে সবর দান করেন, যে আল্লহ তায়া’লার নিকট পবিত্রতা চায় করে আল্লহ তায়া’লা তাহাকে পবিত্র করিয়া দেন। আমি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম হইতে এই কথাগুলি শুনিয়া আর কিছু না চাহিয়াই চুপচাপ ফিরিয়া আসিলাম। ইহার পর আল্লহ তায়া’লা তাঁহাকে ঐ মর্যাদা দান করিলেন যে, কম বয়সের সাহাবীগণের মধ্যে তাঁহার মত বড় মর্তবার আলীম আরেকজন পাওয়া সুষ্কর বায়পার। (ইসাবাহ, ইস্তীআব)

হযরত ইমাম হুসাইন রদিয়াল্লহু আ’নহু এর শৈশবে ইলমের প্রতি অনুরাগ

সাইয়্যেদ (সৈয়দ) হযরত ইমাম হুসাইন রদিয়াল্লহু আ’নহু আপন ভাই হযরত ইমাম হাসান রদিয়াল্লহু আ’নহু হইতে এক বছরের ছোট ছিলেন। এই জন্য রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের ইত্নেকালের সময় তাঁহার বয়স আরও কম ছিল, অর্থাৎ ছয় বছর কয়েক মাস। ছয় বছরের বাচ্চা দ্বীনি কথা কতটুকুই বা স্মরণ রাখিতে পারে।কিন্তু হযরত ইমাম হুসইন রদিয়াল্লহু আ’নহু এর রেওয়ায়াতসমূহও হাদীসের কিতাবে বর্ণিত রহিয়াছে। মুহাদ্দিসগণ তাঁহাকে ঐ সমস্ত সাহাবীদের অন্তর্ভূক্ত করিয়াছেন যাঁহাদের নিকট হইতে আটটি হাদিস বর্ণিত রহিয়াছে।

ইমাম হুসইন রদিয়াল্লহু আ’নহু বলেন, আমি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট হইতে শুনিয়াছি, কোন মুসলমান পুরুষ হউক বা মহিলা যদি কোন মুসীবাতে আক্তান্ত হয় এবং দীর্ঘদিন পর ঐ মুসীবাতের কথা স্মরণ আসে আর সে إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ (সূরা বাকারাহঃ ১৫৬) পড়ে অতবে তাহাকে তখনও ঐ পরিমাণ সওয়াব দেওয়া হইবে যেই পরিমাণ মুসীবাতের সময় দেওয়া হইয়াছিল। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ইহাও বলিয়াছেন যে, আমার উম্মত যখন নদী পথে কোন যানবাহনের উপর সওয়ার হওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করে بِسْمِ اللّهِ مَجْرَاهَا وَمُرْسَاهَا إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ (সূরা হুদঃ ৪১) তবে ইহা ডুবিয়া যাওয়া হইতে নিরাপত্তার কারণ হইবে।

ইমাম হুসইন রদিয়াল্লহু আ’নহু পায়ে হাঁটিয়া পঁচিশবার হজ্জ করিয়াছেন। নামায, রোযা অধিক পরিমাণে আদায় করিতেন। সদকা-খাইরাত ও দ্বীনের অন্যান্য আ’মাল অধিকহারে করার প্রতি যত্নবান ছিলেন।

রবীয়া রদিয়াল্লহু আ’নহু বলেন, আমি হুসইন রদিয়াল্লহু আ’নহু কে জিজ্ঞাসা করিলাম, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কোন কথা আপনার স্মরণ আছে কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আমি একটি জানালার উপর উঠিলাম। সেখানে কিছু খেজুর রাখা ছিল। আমি উহা হইতে একটি খেজুর মুখে দিলাম। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন, ইহা ফেলিয়া দাও, আমাদের জন্য সদকা জায়েজ নয়।

হযরত হুসইন রদিয়াল্লহু আ’নহু হইতে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের এই এরশাদও বর্ণিত আছে যে, মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য হইল অনর্থক কোন কাজে লিপ্ত না হওয়া। (উদুসুল গাবাহ, ইস্তীআব)

ফায়দাঃ সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম দের এই ধরণের বহু ঘটনা রহিয়াছে যে, তাঁহারা রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সহিত সংঘটিত বাল্যকালের ঘটনা বর্ণনা করিয়াছেন এবং উহা মুখস্থ রাখিয়াছেন।

মাহমূদ ইবনে রবী রদিয়াল্লহু আ’নহু নামক জনৈক সাহাবী যাঁহার বয়স রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের সময় পাঁচ বছর ছিল, তিনি বলেন, আমি সারাজীবন এই কথা ভুলিব না যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের ঘরে তাশরীফ আনিলেন। আমাদের এখানে একটি কুপ ছিল। উহার পানি দ্বরা আমার মুখে একটি কুলি নিক্ষেপ করিলেন। (ইসাবাহ)

ফাযায়েলে আমাল (দারুল কিতাব, অক্টোবর ২০০১) পৃষ্ঠা ৮৪৬-৮৪৭