Posts Tagged ‘জাহান্নাম’

ইমাম হাসান রদিয়াল্লহু আ’নহু এর শৈশবে ইলম চর্চা

সাইয়্যেদ (সৈয়দ) ইমাম হাসান রদিয়াল্লহু আ’নহু এর জন্ম অধিকাংশের মতে তৃতীয় হিজরীর রমযান মাসে হয়। এই হিসেবে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের সময় তাঁহার বয়স সাত বৎসর আরও কয়েক মাস হয়। সাত বৎসরই বা কি, যাহাতে কোন ইলমী কৃতিত্ব অর্জন করা যাইতে পারে। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও তাঁহার নিকট হইতে হাদীসে কয়েকটি রেওয়ায়াত বর্ণিত রহিয়াছে। আবুল হাওরা নামক এক ব্যক্তি হাসান রদিয়াল্লহু আ’নহু কে জিজ্ঞাসা করিলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কোন কথা আপনার স্মরণ আছে কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আমি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সহিত যাইতে ছিলাম। পথে সদকার খেজুরের একটি স্তুপ পড়িয়া ছিল। আমি সেখান হইতে একটি খেজুর তুলিয়া মুখে দিলাম। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন, খাখ, খাখ। আর আমার মুখ হইতে বাহির করিয়া ফেলিলেন। অতঃপর বলিলেন, আমরা সদকার মাল খাই না। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামায রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট হইতে শিখিয়াছি। (আহমাদ)

হযরত হাসান রদিয়াল্লহু আ’নহু বলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বিতর নামাযে পড়িবার জন্য এই দোয়া শিখাইয়াছিলেন–

اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ, وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافيْتَ, وَتوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ, وَبَارِكْ لِي فِيمَا أعْطيْتَ, وَقِنِي شَرَّ مَا قضَيْتَ, فإنَّكَ تَقْضِى وَلا ُيُقْضَى عَلَيْكَ, إنَّهُ لا يَذِلُُ مَنْ وَالَيتَ, وَلا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ, تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ.

অর্থঃ “হে আল্লহ আপনি যাহাদিগকে হিয়াদাত দান করিয়াছেন তাহাদের অন্তর্ভুক্ত করিয়া আমাকেও হিদায়াত দান করুন। আপনি যাহাদিগকে নিরাপত্তা দান করিয়াছেন তাহাদের মধ্যে গণ্য করিয়া আমাকেও নিরাপত্তা দান করুন। আপনি আমার সমস্ত কাজের জিম্মাদার হইয়া যান যেমন আপনি আরও বহু লোকের জিম্মাদার রহিয়াছেন আর যাহা কিছু আমাকে দান করিয়াছেন উহাতে বরকত দান করুন। আর যাহা কিছু আমার তকদীরে রহিয়াছে উহার ক্ষতি হইতে আমাকে বাঁচান; আপনি যাহা চান তাহা করিতে সক্ষম। আপনার বিরূদ্ধে কেহ কোন ফয়সালা করিতে পারে না। আপনার সত্ত্বা বরকতময় এবং সর্বোচ্চ ও সর্ব মহান।”

ইমাম হাসান রদিয়াল্লহু আ’নহু বলেন, আমি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম হইতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি ফযরের নামাযের পর সুর্যোদয় পর্যন্ত ঐ স্থানে বসিয়া থাকিবে সে জাহান্নামের অগ্নি হইতে মুক্তি পাইবে।

হযরত হাসান রদিয়াল্লহু আ’নহু কয়েকবার পায়দল হজ্জ করিয়াছেন এবং বলিতেন, আমার এই ব্যাপারে লজ্জা হয় যে, মৃত্যুর পর আল্লহ তায়া’লার সহিত সাক্ষাত করিব অথচ তাঁহার ঘরে পায়ে হাঁটিয়া যাই নাই।

তিনি অত্যন্ত ধৈর্য্যশীল ও পরহেযগার ছিলেন। মুসনাদে আহমাদ কিতাবে তাঁহার নিকট হইতে একাধিক রেওয়ায়াত নকল করা হইয়াছে। তালকীহ নামক কিতাবের গ্রন্থকার তাঁহাকে ঐ সমস্ত সাহাবীর তালিকাভুক্ত করিয়াছেন যাহাদের নিকট হইতে তেরটি হাদীস নকল করা হইয়াছে। সাত বৎসর বয়সই বা কি, ঐ বয়সে এতগুলি হাদীস মুখস্থ রাখা এবং বর্ণনা করা প্রখর স্মরণ শক্তি এবং চরম আগ্রহের প্রমাণ। আফসোসের বিষয় যে, আমরা সাত বৎসর পর্যন্ত আপন সন্তানকে দ্বীনের সাধারণ বিষয়ও শিক্ষা দেই না।

ফাযায়েলে আমাল (দারুল কিতাব, অক্টোবর ২০০১) পৃষ্ঠা ৮৪৪-৮৪৬

হযরত ইবনে যুবাইর রদিয়াল্লহু আ’নহুমা এর রক্তপান

রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম একবার শিঙ্গা লাগাইলেন। উহার ফলে যে রক্ত বাহির হইল উহা কোথাও মাটির নিচে চাপা দেওয়ার জন্য হযরত আ’ব্দুল্লহ ইবনে যুবাইর রদিয়াল্লহু আ’নহুমা কে দিলেন। তিনি গেলেন এবং ফিরিয়া আসিয়া বলিলেন, চাপা দিয়া আসিয়াছি। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করিলেন, কোথায়? তিনি বলিলেন, আমি উহা পান করিয়া ফেলিয়াছি।

রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমাইলেন, যাহার শরীরে আমার রক্ত প্রবেশ করিবে জাহান্নামের আগুন তাহাকে স্পর্শ করিতে পারিবে না। কিন্তু তোমার জন্য মানুষের দ্বারা ধ্বংস আর মানুষের জন্য তোমার দ্বারা। (খামীস)

ফায়দাঃ রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের দেহ নির্গত জিনিস প্রসাব-পায়খানা ইত্যাদি পাক। এইজন্য ইহাতে কোন আপত্তি নাই। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যে বলিয়াছেন, ‘ধ্বংস রহিয়াছে’ ইহার অর্থ উলামা কেরাম লিখিয়াছেন যে, বাদশাহী ও হুকুমতের দিকে ইঙ্গিত করা হইয়াছে। অর্থাৎ হুকুমত হইবে এবং লোকেরা উহাতে বাধা প্রদান করিবে। যেমন রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইবনে যুবাইর রদিয়াল্লহু আ’নহুমা এর জন্মের সময়ও এইরূপ একটি ইঙ্গিত করিয়াছিলেন। তিনি বলিয়াছিলেন যে, নেকড়ে বাঘের দলের মধ্যে একটি দুম্বা। আর সেই নেকড়েগুলি কাপড় পরিহিত হইবে। পরিশেষে ইয়াযীদ ও আব্দুল মালেকের সহিত হযরত আ’ব্দুল্লহ ইবনে যুবাইর রদিয়াল্লহু আ’নহুমা এর বিখ্যাত যুদ্ধ হয় এবং শেষ পর্যন্ত শাহাদাত বরণ করেন।

ফাযায়েলে আমাল (দারুল কিতাব, অক্টোবর ২০০১) পৃষ্ঠা ৮৫৮-৮৫৯

মালেক ইবনে সিনান রদিয়াল্লহু আ’নহু এর রক্তপান

উহুদের যুদ্ধে যখন রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারা মুবারকে অথবা মাথা মুবারকে লৌহ শিরস্ত্রাণের দুইটি কড়া ঢুকিয়া গিয়াছিল তখন হযরত আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু দ্রুত আগাইয়া আসিলেন। এবং অপর দিক হইতে হযরত আবু উবাইদাহ রদিয়াল্লহু আ’নহু দৌড়াইয়া আসিলেন এবং আগে বাড়িয়া লোহার উক্ত কড়া দাঁত দ্বারা টানিতে আরম্ভ করিলেন। একটি কড়া বাহির করিলেন যদ্দরুন হযরত আবু উবাইদাহ রদিয়াল্লহু আ’নহু এর একটি দাঁত ভাঙ্গিয়া গেল। তিনি উহার পরওয়া করিলেন না। অপর কড়াটি টান দিলেন আরও একটি দাঁত ভাঙ্গিয়া গেল। কিন্তু তিনি সেই কড়াটি বাহির করিয়াই আনিলেন।  ঐ কড়াগুলি বাহির হওয়ার কারণে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র শরীর হইতে রক্ত বাহির হইতে লাগিল। তখন হযরত আবু সাঈ’দ খুদরী রদিয়াল্লহু আ’নহু এর পিতা মালেক ইবনে সিনান রদিয়াল্লহু আ’নহু নিজের ঠোঁটের সাহায্যে ঐ রক্ত চুষিয়া গিলিয়া ফেলিলেন। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমাইলেন। যাহার রক্তের সহিত আমার রক্ত মিশ্রিত হইয়াছে তাহাকে জান্নামের আগুন স্পর্শ করিতে পারিবে না। (কুররাতুল উয়ুন)

ফাযায়েলে আমাল (দারুল কিতাব, অক্টোবর ২০০১) পৃষ্ঠা ৮৫৯