Posts Tagged ‘হিজরত’

রোমের যুদ্ধে হযরত ইবনে যুবাইর রদিয়াল্লহু আ’নহুম এর বীরত্ব

হিজরী ২৬ সনে হযরত উ’সমান রদিয়াল্লহু আ’নহু এর খেলাফত আমলে মিশরের প্রথম গভর্নর হযরত আ’মর ইবনুল আ’স রদিয়াল্লহু আ’নহু এর স্থলে হযরত আ’ব্দুল্লহ ইবনে আবি সারাহ রদিয়াল্লহু আ’নহু শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। তিনি রোমকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বিশ হাজারের একটি সৈন্যদল সহ বাহির হইলেন। রোমক সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় দুই লক্ষ। প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। রোমক সেনাপতি জারজীর ঘোষণা করিল যে, হযরত আ’ব্দুল্লহ ইবনে আবি সারাহ (রদিয়াল্লহু আ’নহু)কে যে ব্যক্তি হত্যা করিবে তাহার সহিত আমার কন্যা বিবাহ দিব এবং একলক্ষ দিনার পুরষ্কারও দিব। এই ঘোষণার কারণে মুসলমানদের মধ্যে কেহ কেহ চিন্তিত হইয়া পড়িলেন। হযরত আ’ব্দুল্লহ ইবনে যুবাইর রদিয়াল্লহু আ’নহুমা জানিতে পারিয়া বলিলেন, চিন্তার কারণ নাই। আমাদের পক্ষ হইতেও ঘোষণা দেওয়া হউক যে, যে ব্যক্তি জারজীরকে হত্যা করিবে তাহার সহিত জারজীরের কন্যা বিবাহ দেওয়া হইবে এবং একলক্ষ দীনার পুরষ্কারও দেওয়া হইবে। উপরন্তু তাহাকে ঐ সমস্ত শহরের আমীরও বানাইয়া দেওয়া হইবে।

মোটকথা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত লড়াই চলিতে থাকে। হযরত আ’ব্দুল্লহ ইবনে যুবাইর রদিয়াল্লহু আ’নহুমা দেখিলেন যে, জারজীর সৈন্যদলের পিছনে রহিয়াছে এবং সৈন্যরা তাহার সামনে রহিয়াছে। দুইজন বাঁদী তাহাকে ময়ুরের পাখা দ্বারা ছায়াদান করিতেছে। তিনি অতর্কিতে সৈন্যদলের মধ্যে হইতে সরিয়া একাকী যাইয়া তাহার উপরে হামলা করিলেন। সে ভাবিতেছিল যে, এই লোকটি একা আসিতেছে হয়ত কোন সন্ধির খবর লইয়া আসিতেছে। কিন্তু তিনি সোজা তাহার নিকটে পৌঁছিয়া তাহার উপর হামলা করিয়া দিলেন। এবং তরবারী দ্বারা শিরোচ্ছেদ করিয়া বর্শার মাথায় উঠাইয়া লইয়া আসিলেন। সবাই হতবাক হইয়া শুধু দেখিতেই রহিয়া গেল।

ফায়দাঃ হযরত আ’ব্দুল্লহ ইবনে যুবাইর রদিয়াল্লহু আ’নহুমা অল্প বয়স্কই ছিলেন। হিযরতের পর মুহাজিরদের মধ্যে প্রথম সন্তান তিনিই জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁহার জন্মগ্রহণে মুসলমানগণ অত্যন্ত আনন্দিত হইয়াছিলেন। কেননা, এক বৎসর যাবত কোন মুহাজিরের কোন পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে নাই। তখন ইয়াহুদীরা বলিয়াছিল যে, আমরা মুহাজিরদের উপর যাদু করিয়াছি, তাহাদের পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করিবে না। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণতঃ বাচ্চাদের বায়াত করিতেন না। কিন্তু হযরত আ’ব্দুল্লহ ইবনে যুবাইর রদিয়াল্লহু আ’নহুমা কে সাত বৎসর বয়সে বায়াত করিয়াছিলেন। উক্ত যুদ্ধের সময় তাঁহার বয়স ছিল চব্বিশ কি পঁচিশ বৎসর। এই বয়সে দুই লক্ষ সৈন্যের বাধাকে ডিঙ্গাইয়া এইভাবে সেনাপতির শির কাটিয়া আনা কোন সাধারণ ব্যাপার নহে।

ফাযায়েলে আমাল (দারুল কিতাব, অক্টোবর ২০০১) পৃষ্ঠা ৮৩৮-৮৩৯

হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত রদিয়াল্লহু আ’নহু এর কুরআন হিফয করা

হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত রদিয়াল্লহু আ’নহু ঐ সকল উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সাহাবাহ দের মধ্যে গণ্য ছিলেন, যাহারা সেই যুগের বড় আলেম ও বড় মুফতী হিসাবে পরিগণিত হইতেন। বিশেষ করিয়া তিনি ফারায়েয শাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন। বর্ণিত আছে যে, মাদীনা মুনাওয়ারায় তিনি ফতওয়া, বিচার, ফারায়েয ও কিরআত বিষয়ে তিনি শীর্ষস্থানীয় লোকদের মধ্যে গণ্য হইতেন। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হিযরত করিয়া মদীনা মুনাওয়ারায় আগমন করেন ঐ সময়ে তিনি অল্প বয়স্ক বালক ছিলেন, তাঁহার বয়স ছিল এগার বছর। এইজন্যই প্রথম দিকের যুদ্ধসমূহ যেমন, বদর প্রভৃতিতে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অনুমতি পান নাই। হিযরতের পাঁচ বছর পূর্বে ছয় বৎসর বয়সে তিনি ইয়াতীমও হইয়া গিয়াছিলেন। হিযরতের পর রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মাদীনায় পৌঁছিলেন, তখন অন্যান্য লোক যেমন তাঁহার খেদমতের হাজির হইতে ছিলেন এবং বরকত হাসিলের জন্য বাচ্চাদিগকেও সঙ্গে আনিতেছিলেন তখন হযরত যায়েদ রদিয়াল্লহু আ’নহু কেও তাঁহার খেদমতে হাজির করা হইল। যায়েদ রদিয়াল্লহু আ’নহু বলেন, আমাকে যখন রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে পেশ করা হইল তলহন আরজ করা হইল যে, এই ছেলেটি নাজ্জার গোত্রের। সে আপনার আগমনের পূর্বেই কুরআন শরীফের সতেরটি সূরা মুখস্থ করিয়া ফেলিয়াছে। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম পরীক্ষা করার জন্য আমাকে পড়ীতে বলিলেন। আমি তাঁহাকে সুরা কা’ফ পড়িয়া শুনাইলাম। তিনি আমার পড়া পছন্দ করিলেন।

রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদীদের নিকট যে সমস্ত চিঠি পাঠাইতেন সে গুলি ইয়াহুদীরাই লিখিত। একবার রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমাইলেন যে, ইয়াহুদীদের দ্বারা যে সমস্ত চিঠিপত্র লেখা হয় উহাতে আমার পূর্ণ আস্থা হয় না। হয়ত তাহারা কোন বেশকম করিয়া ফেলে। তুমি ইয়াহুদীদের ভাষা শিখিয়া লও। হযরত যায়েদ রদিয়াল্লহু আ’নহু বলেন যে, আমি পনের দিনের মধ্যে তাহাদের হিব্রুভাষায় পারদর্শী হইয়া গিয়াছিলাম। ইহার পর যে সকল পত্র তাহাদের কাছে পাঠানো হইত উহা আমিই লিখিতাম এবং যে সকল পত্র ইয়াহুদীদের পক্ষ হইতে আসিত উহা আমিই পড়িতাম।

আরেক হাদীসে আছে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন, আমাকে কোন কোন লোকের নিকট সুরিয়ানী ভাষায় পত্র লিখিতে হয়, তাই আমাকে সুরিয়ানী ভাষা শিখিতে বলিলেন। আমি সতের দিনে সুরিয়ানী ভাষা শিখিয়া ফেলিয়াছিলাম। (ফাতহুল বারী, ইসাবাহ)

ফাযায়েলে আমাল (দারুল কিতাব, অক্টোবর ২০০১) পৃষ্ঠা ৮৪৩-৮৪৪