হযরত আ’ব্দুল্লহ ইবনে আ’মর ইবনুল আ’স রদিয়াল্লহু আ’নহুমা এর হাদীস মুখস্থ করা

হযরত আ’ব্দুল্লহ ইবনে আ’মর ইবনুল আ’স রদিয়াল্লহু আ’নহুমা ঐ সকল ইবাদাতগুজার ও দুনিয়াবিমুখ সাহাবাহদের মধ্যে ছিলেন, যাহারা দৈনিক কুরআন মজীদ এক খতম করিতেন। সারারাত্র ইবাদাতে মশগুল থাকিতেন এবং দিনে সর্বদা রোযা রাখিতেন। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁহাকে এত অধিক মেহনতের উপরে সতর্কও করিয়াছেন এবং এরশাদ করিয়াছেন যে, ইহাতে শরীর দুর্বল হইয়া পড়িবে এবং সারারাত্র জাগ্রত থাকার কারণে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হইয়া যাইবে। শরীরের হক রহিয়াছে, পরিবার-পরিজনেরও হক রহিয়াছে এবং সাক্ষাতকারীদেরও হক রহিয়াছে। তিনি বলেন, আমার নিয়ম ছিল প্রতিদিন এক খতম করিতাম।  রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন, এক মাসে এক খতম পড়। আমি আরজ করিলাম, ইয়া রসুলুল্লহ! আমাকে আমার যৌবন ও শক্তি দ্বারা উপকৃত হওয়ার অনুমতি দান করুন। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন, ঠিক আছে ২০ দিনে এক খতম পড়। আমি আরজ করিলাম, ইয়া রসুলুল্লহ! ইহা অনেক কম, আমাকে আমার যৌবন ও শক্তি দ্বারা উপকৃত হওয়ার অনুমতি দান করুন। মোট কথা আমি এইভাবে আরজ করিতে থাকিলাম। অবশেষে তিন দিনে এক খতম করিবার আনুমতি হইল।

তাঁহার অভ্যাস ছিল যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীসমূহ লিপিবদ্ধ করিয়া রাখিতেন যাহাতা স্মরণে থাকে। এমনি ভাবে তাঁহার নিকট রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের লিপিবদ্ধ একটি সংকলণ ছিল উহার নাম তিনি ‘সাদেকা‘ রাখিয়াছিলেন। তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট যাহা শুনিতাম মুখস্থ করার উদ্দেশ্যে লিপিবদ্ধ করিয়া ফেলিতাম। লোকেরা আমাকে এই বলিয়া নিষেধ করিলেন যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামও তো মানুষ। কখনও রাগ ও নারাজীর কারণে কাহাকেও কিছু বলেন, কখনও খুশী ও হাসি-কৌতুক অবস্থায়ও কিছু বলেন, সুতরাং সব কথা লিখিও না। আমি লেখা বন্ধ করিয়া দিলাম। একবার রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট উহা ব্যক্ত করিলাম। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন, লিখিতে থাক, ঐ পাক যাতের কসম, যাঁহার হাতে আমার জান, এই মুখ হইতে খুশী নারাজী কোন অবস্থায় হক ছাড়া কোন কথা বাহির হয় না। (আহমাদ, ইবনে সা’দ)

ফায়দাঃ হযরত আ’ব্দুল্লহ ইবনে আ’মর রদিয়াল্লহু আ’নহুমা বড় ধরণের আবেদ ও অধিক ইবাদাতকারী হিসাবে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও হযরত আবু হুরইরহ রদিয়াল্লহু আ’নহু বলেন, সাহাবাহদের মধ্যে আ’ব্দুল্লহ ইবনে আ’মর রদিয়াল্লহু আ’নহু ছাড়া আমার চাইতে অধিক হাদীস বর্ণনাকারী আর কেহ নাই। কেননা তিনি লিখিতেন, আমি লিখিতাম না। ইহাতে বুঝা যায় তাঁহার বর্ণনা হযরত আবু হুরইরহ রদিয়াল্লহু আ’নহু এর চাইতেও বেশী। যদিও আমাদের যুগে আবু হুরইরহ রদিয়াল্লহু আ’নহু এর হাদীস অনেক বেশী পাওয়া যায়। ইহার অনেক কারণ রহিয়াছে। কিন্তু এত অধিক ইবাদাত সত্ত্বেও ঐ যামানায় তাঁহার বর্ণিত প্রচুর হাদীস মওজুদ ছিল।

ফাযায়েলে আমাল (দারুল কিতাব, অক্টোবর ২০০১) পৃষ্ঠা ৮৪২-৮৪৩